আপনি হোন ভিন্ন.. হোন অনন্য..

Home » আপনি হোন ভিন্ন.. হোন অনন্য..

কখনো দেখা যায়, দুজন লোকের মাঝে কথা চলছে। প্রচন্ড তর্কের মধ্য দিয়ে তাদের কথা শেষ হল। আবার এমন দুজনও দেখা যায় যাদের কথা সমাপ্ত হয় সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে, হাসিমুখে।মূলত কথা বলার দক্ষতা ও যোগ্যতার পার্থক্যের কারণে এমনটি হয়ে থাকে।

দুজন বক্তা একই বিষয়ে বয়ান করেন। কিন্তু লক্ষ্য করলে আপনি দেখবেন, একজনের বয়ান চলার সময় লোকজন হয়তো ঘুমায়, নয়তো তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে উঠে চলে যায়। অথচ অপর জনের বয়ানের সময় দেখা যায়, শ্রোতারা বিমুগ্ধ হয়ে তার আলোচনা শোনে। গভীর দৃষ্টিতে বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের পলকও পড়ে না। কেউ কথা বললে তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে। এমন কেন হয়? কেন একজনের আলোচনার সময় থাকে পিনপতন নীরবতা, পলকহীন দৃষ্টি, অখন্ড মনোযোগ আর অপরজনের আলোচনার সময় বিক্ষিপ্ত নড়াচড়া, পরস্পর কথাবার্তা কিংবা মোবাইলে মেসেজ পাঠে মগ্নতা?

বক্তৃতা করার যোগ্যতায় সূক্ষ্ম পার্থক্যের কারণেই কিন্তু এমনটা হয়ে থাকে। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন। কোন কোন শিক্ষকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যখন তিনি মাদ্রাসার বারান্দায় হাঁটেন ছাত্ররা জটলা করে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। কেউ মুসাফাহা করে, কেউ পরামর্শ চায়। আবার কেউ কোন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস করে। তিনি নিজ দপ্তরে বসে ছাত্রদের আসার অনুমতি দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো কামরা ছাত্রে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অথচ অন্য অনেক শিক্ষক আছেন, পথে হাটলে কেউ তার সাক্ষাতে এগিয়ে আসে না। হাঁটেন একা, মসজিদ থেকে বের হন একা। কেউ হাসিমুখে এগিয়ে এসে তাকে সালাম করে না। পরামর্শ চাইতেও কেউ আসে না। রাত-দিন চব্বিশ ঘণ্টা দপ্তরে বসে থাকলেও কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে আসে না। এমন কেন হয়? 

মানুষের সঙ্গে মেলা-মেশার যোগ্যতার পার্থক্যের কারণেই কিন্তু এমনটি হয়ে থাকে। একজন মানুষ এমন, যিনি কোন মজলিসে উপস্থিত হলে সবাই তাকে দেখে আনন্দিত হয়। হাসিমুখে সালাম জানায়। সবাই কামনা করে, তিনি যেন তার পাশে আসন গ্রহণ করেন। অথচ একই সময় অন্য একজন সে মজলিসে এলে কেউ তার দিকে ফিরে তাকায় না। কেউ কেউ হয়তো সৌজন্য রক্ষার খাতিরে নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে তার সঙ্গে মুসাফাহা করে। কিন্তু কেউ তার জন্য জায়গা করে দেয় না। নিজের পাশে বসার জন্য ডাকে না। কেন এমন হয়? প্রকৃতপক্ষে মানুষকে আপন করে নেয়া এবং মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করার যোগ্যতার তারতম্যের কারণেই এমন হয়ে থাকে। একজন পিতা বাড়িতে প্রবেশ করতেই তার সন্তানেরা হাসিমুখে এগিয়ে আসে। আরেকজন পিতা ঘরে এলে সন্তানেরা তার দিকে ফিরেও তাকায় না। সন্তানের সঙ্গে আচরণ দক্ষতার পার্থক্যের কারণেই এমনটি হয়।

মানুষের সঙ্গে মেলামেশার ও সকলকে আপন করে নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যোগ্যতায় ভিন্নতা দেখা যায়। কেউ হয়তো মুহূর্তের মধ্যে অন্যকে আপন করে নিতে পারে, আবার কেউ পারে না।তবে মানুষকে আপন করে তাদের মনে জায়গা করে নেয়া এবং নিজের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও আকর্ষণ সৃষ্টি করা খুব কঠিন কিছু নয়। আমি কথাটি বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলছি না। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি। আমি দেখেছি, নির্দিষ্ট ও সহজ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করে বেশিরভাগ মানুষেরই মন জয় করা সম্ভব। তবে শর্ত হলো, সে পদ্ধতিগুলো প্রথমে আন্তরিকভাবে আত্মস্থ করতে হবে। এরপর সুন্দরভাবে সেগুলোর প্রয়োগ করতে হবে।

ব্যবহারের মাধুর্যের কারণে আমাদের অজান্তেই অনেক সময় অন্যরা আমাদের প্রতি প্রভাবিত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে আমার জীবনের একটি ঘটনা শুনুন। আজ ১৩ বছর যাবৎ একটি সামরিক ইউনিভার্সিটির মসজিদে আমি ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছি। মসজিদে যাওয়ার পথে একটি গেট আছে। একজন দারোয়ান সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। যাওয়ার পথে সব সময় তাকে দেখে আমি মুচকি হাসতাম এবং সালাম করতাম। বেশিরভাগ সময় নামাজ চলাকালে আমার মুঠোফোনে অসংখ্য এসএমএস ও মিসড কলে জমা হয়ে থাকতো। তাই ফেরার পথে গাড়িতে বসে আমি সেগুলো পড়তাম এ কারণে ফেরার সময় তার দিকে আর তাকানো হতো না। দারোয়ান গেট খুলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন কিন্তু আমি তার দিকে তাকাতাম না এবং একটু মুচকি হাসিও দিতাম না। একদিন হঠাৎ বের হওয়ার সময় আমাকে থামিয়ে তিনি বললেন, ‘শায়খ! আপনি কি আমার প্রতি কোনো কারণে রাগ করেছেন?’ আমি বললাম, ‘না তো! কেন?’ তিনি বললেন ‘আপনি যখন প্রবেশ করেন, আমাকে দেখে হাসিমুখে সালাম দেন। অথচ বের হওয়ার সময় হাসিও দেন না, আপনাকে আনন্দিতও মনে হয় না।’

দারোয়ান ছিলেন খুবই সাদাসিধে এবং স্বচ্ছ মনের অধিকারী। আমার আচরণে অলক্ষেই আমাকে তিনি ভালোবেসে ফেলেছেন। আমি তাকে আমার ব্যস্ততার কারণ খুলে বললাম। সেদিন আমার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মানুষকে আপন করে নেয়ার দক্ষতাগুলো যখন আমাদের স্বভাবগুনে পরিণত হয়, তখন আমরা উদাসীন থাকলেও মানুষ সেগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করে।

আলোর ঝলক…

সম্পদ উপার্জন করতে গিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না,

সম্পর্কই সম্পদ উপার্জনের পথ খুলে দেবে।

মুলঃ শায়েখ মুহাম্মাদ আরিফী (দাঃবাঃ)

WEEKLY BAYAN

Why Choose Us?

  • Balanced Islamic and Academic education program
  • Affordable tuition
  • Strong Islamic Tarbiya / Character program
  • Qualified teachers
  • Low teacher to student ratio

SADQAH JAARIYA

You will continuously get the rewards of the teaching of Quraan, Hadith and Fiqh. As well as helping the society to be a Muslim Society.

DONATE