বিশ বছরের সাধারণ কোনো যুবককে আপনি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। দেখবেন, তার একটি নির্দিষ্ট বাচনভঙ্গি ও নির্দিষ্ট চিন্তা ধারা রয়েছে।বছর দশেক পর পুনরায় তাকে পর্যবেক্ষণ করুন। লক্ষ্য করবেন, তার যোগ্যতা পূর্বের মতোই রয়ে গেছে। তার কোনো উন্নতি হয়নি। পক্ষান্তরে আরেকজন যুবককে দেখবেন, প্রতিদিনই তার উন্নতি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত সে নিজের যোগ্যতার বিকাশ ঘটাচ্ছে। এমন কেন হয়? আসুন, আমরা বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি অনুধাবন করি।
মনে করুন, দুজন ব্যক্তি নিয়মিত রেডিও শোনে। একজন এমন প্রোগ্রামগুলোই শোনে যেগুলো তার চিন্তাশক্তির উন্নতি ঘটায়, মেধা বিকাশে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে ভাষার দক্ষতা,উপস্থাপনা শৈলী এবং আলোচনার পদ্ধতি ও বিতর্কে কলা-কৌশল সে আয়ত্ত করে নেয়। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়জন শুধু নাটক ও গন-বাদ্য শোনে সময় নষ্ট করে।
এবার বলুন, পাঁ-দশ বছর পর দু'জনের চিন্তা ধারা কেমন হবে? দুজনের মধ্যে কার যোগ্যতা বেশি হবে? নিশ্চয়ই প্রথমজনের।
কেবল যোগ্যতায় নয়, দুজনের আচরণ ও উচ্চারণে আপনি লক্ষনীয় ভিন্নতা অনুভব করবেন। প্রথমজন কোন বিষয়ে দলিল প্রমাণ দেয়ার ক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসের শরণাপন্ন হবে। আর দ্বিতীয় জন গায়ক-গায়িকা ও নায়ক-নায়িকাদের ডায়লগ দিয়ে দলিল পেশ করবে।
এমনই একজন একদিন আমার সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ বললো, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “হে বান্দা! তুমি চেষ্টা করো। আমিও তোমার সঙ্গে চেষ্টা করছি”!
আমি তাকে সতর্ক করে দিয়ে বললাম,'ভাই! এটাতো কোরআনের আয়াত নয়।
আমার কথা শুনে লোকটার চেহারার রঙ বদলে গেল। সে একেবারে চুপ হয়ে গেল। পরবর্তীতে তার কথাটি নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা করলাম। এটা মূলত মিশরীয় একটি প্রবাদ বাক্য। আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, কোন ধারাবাহিক নাটক শুনতে শুনতে এই প্রবাদ বাক্যটি তার মনে গেঁথে গেছে। আরেকটি বিষয় ভেবে দেখুন,আমরা যারা পেপার-পত্রিকা পড়ি, আমাদের ক'জনের নজর থাকে অর্থবহ সংবাদ বা ব্যক্তিউন্নয়নে সহায়ক তথ্যসমূহের দিকে, আর কতজনের চোখ থাকে খেলার খবর ও বিনোদনের পাতার দিকে? অবশ্যই দ্বিতিয়টার দিকে বেশির ভাগ পাঠকের আকর্ষণ থাকে। এ কারণেই পত্র-পত্রিকাগুলোতেও বর্তমানে খেলার খবর ও বিনোদনের বাড়ানোর প্রতিযোগীতা চলছে।
আমাদের চিন্তা-চেতনা এবং আমাদের গল্প ও আলোচনা মজলিসগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। সর্বত আমরা বিনোদনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
আপনি যদি জীবনে বড় হতে চান তাহলে প্রতি মুহূর্তে আপনাকে নিজের উন্নতির কথা চিন্তা করতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা বিকাশে সহায়ক কাজ করতে হবে। বহুমুখী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
আব্দুল্লাহ নামে কর্মঠ ও উদ্যমী এক ব্যক্তি ছিল। তবে তার মাঝে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার কিছুটা অভাব ছিল। একদিন সে যোহরের নামায পড়ার জন্য মসজিদে রওনা হল। পথে সে একজন লোককে দেখল, খেজুর গাছের উপর বসে কাজ করছে। নামাজের আর অল্প কিছু সময় বাকি ছিল। কিন্তু লোকটির সেদিকে বিন্দুমাত্র মনোযোগ ছিল না। অবস্থা দেখে আব্দুল্লাহ প্রচণ্ড রেগে গেল। কঠোর স্বরে বলল, 'এই বেটা! নেমে আয় গাছ থেকে। নামাজ পড়বি না?
লোকটা শান্তভাবে উত্তর দিলো। 'ঠিক আছে, নামছি।'
আব্দুল্লাহ বলল, 'তাড়াতাড়ি কর। ব্যাটা! নামাজের গুরুত্ব নেই? গাধা কোথাকার!' গাধা বলে লোকটির মাথায় রক্ত উঠে গেল। রাগে ও গোশ্বায় সে বলতে লাগল 'কি! আমি গাধা? দ্বারা ব্যাটা, তোকে দেখাচ্ছি মজা।'
এরপর একটি লাঠি নিয়ে সে নিচে নামতে লাগল। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্দুল্লাহ চেহারা ঢেকে মসজিদের দিকে দৌড়ে পালালো। লোকটি যেন তাকে চিনতে না পারে! আব্দুল্লাহ মসজিদে চলে গেল।
এদিকে লোকটি গাছ থেকে নেমে রাগে ছটফট করতে লাগল। আব্দুল্লাহকে না পেয়ে কাজ ছেড়ে সে বাড়ি চলে গেল এবং নামায পড়ে কিছুটা শান্ত হলো। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করার জন্য আবার ফিরে এলো।
আসরের সময় আব্দুল্লাহ নামাজ পড়তে বের হল লোকটিকে আগের মতোই গাছের ওপর দেখল। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে এবার সে দাওয়াতের পদ্ধতি পাল্টে ফেলল।
সে লোকটিকে সালাম দিয়ে বলল। 'ভাই! কেমন আছেন?'
লোকটি বলল, 'আলহামদুলিল্লাহ,ভালো'।
আব্দুল্লাহ জিজ্ঞেস করল, 'এবার ফল কেমন হয়েছে?'
লোকটি বললম, 'আলহামদুলিল্লাহ,বেশ ভাল ফলন হয়েছে।'
'আল্লাহ আপনার ফল ও ফসলের বরকত দান করুন। আপনার রিজিক বাড়িয়ে দিন। আপনার পরিশ্রম এর উত্তম প্রতিদান দান করুন। 'আব্দুল্লাহ লোকটির জন্য দোয়া করল।আব্দুল্লাহ দোয়া শুনে লোকটি খুশি হয়ে গেল এবং আমিন আমিন বলতে লাগল।আসরের আযান শুনতে পাননি। আসরের আজান হয়ে গেছে।নামাজ এর সময় ঘনিয়ে আসেছে। এখন একটু নেমে নামাজ পড়ে নিন। নামাযের পর ইনশাআল্লাহ অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করবেন।
এরপর আব্দুল্লাহ তার সুস্থতার দোয়া করল। 'আল্লাহ আপনাকে সবসময় সুস্থ রাখুন।' লোকটি খুশি হয়ে বলল,'হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি এখনই নামছি।'
এরপর সে ধীরে-সুস্থে গাছ থেকে নেমে এলো। নিচে নেমে সে আব্দুল্লাহ এর সাথে মুসাফাহা করল। এরপর বলল,'সুন্দর ব্যবহারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে যোহরের সময় যে লোকটা আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল তাকে ধরতে পারলে বুঝিয়ে দিতাম, গাধা কে?'
মুলঃ শায়েখ মুহাম্মাদ আরিফী (দাঃবাঃ)
You will continuously get the rewards of the teaching of Quraan, Hadith and Fiqh. As well as helping the society to be a Muslim Society.
DONATE